টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ এবং প্রতিকার জেনে নিন
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে আমি আপনাকে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব যে, টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ এবং প্রতিকার সম্পর্কে এবং যদি কোন কারনে আপনি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাহলে কিভাবে আপনি এই টাইফয়েড জ্বর থেকে প্রতিকার পাবেন এ সম্পর্কে থাকবে ধাপে ধাপে জেনে নিন।
তাই যদি আপনার টাইফয়েড হয়ে থাকে তবে আজকের এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। তাই চেষ্টা করবেন আজকের পুরো আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ার।
দেখুন একটি মানুষের শরীরে তখনই জ্বরের মতো অসুখ আসবে। যখন তাপমাত্রার বিরাট একটা পরিবর্তন আসবে। যেমন ধরুন, শীতকাল শেষ হওয়ার পরে যখন গ্রীষ্মকাল আসে। তখন যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, সেটি অনেক মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতি করে বসে। আর এই কারণে মূলত আমাদের মত মানুষের জ্বর হয়ে থাকে।
তবে অন্যান্য সব রোগের তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্রদুর্ভাব দেখা যায় টাইফয়েড জ্বরের। কারণ এই সময়ে মানুষ প্রচুর পরিমাণে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মূলত এটি একটি মারাত্মক পানিবাহিত রোগ। মূলত এই টাইফয়েড জ্বর দুই ধরনের জীবনু থেকে তৈরি হয়ে থাকে। যেমন, সালমোনেলা এবং প্যারাটাইফি।
Table of Contents
টাইফয়েড কি?
তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার ফলে মানুষের শরীরে জ্বরের বাসা বাঁধে। তবে জ্বরের থেকে সবচেয়ে মারাত্মক একটি রোগের নাম হল, টাইফয়েড। মূলত এই টাইফয়েড নামক জ্বর টি সালমোনেলা এবং প্যারাটাইফি। এই দুই ধরনের জীবানু থেকে তৈরি হয়ে থাকে। এবং এই রোগ টি হলো এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। তবে আপনি যদি কোন কারণে এই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাহলে আপনাকে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত ভুগতে হবে।
কারণ টাইফয়েড জ্বরের এই জীবাণু মানুষের মুখ দিয়ে দেহের ভিতর প্রবেশ করে। এবং যখন একটি মানুষের শরীরে এই টাইফয়েড জ্বরের জীবাণু প্রবেশ করে। তখন সাথে সাথেই কোন প্রকার অনুমান করা যায় না। কারণ টাইফয়েড জ্বরের এই জীবন গুলো একটি শরীরে প্রবেশ করার পরে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত শরীরে বাসা বেঁধে থাকে। এবং তারপরে রক্তের মাধ্যমে এই জীবানু গুলো পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ
মনে করুন, আপনার টাইফয়েড হয়েছে কিনা আপনি সেটা বুঝবেন কিভাবে। তো আপনি যদি এই বিষয় টি বুঝতে চান। তাহলে সবার আগে আপনাকে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আর যখন আপনার এই টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো আগে থেকে জানা থাকবে।
তখন আপনি এ গুলোর মাধ্যমে কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে টাইফয়েড হয়েছে কিনা। সে সম্পর্কে অনুমান করতে পারবেন। তো চলুন এবার তাহলে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মূলত আপনি যদি টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে। কোন একজন ব্যক্তির টাইফয়েড সনাক্ত করতে চান। তাহলে আপনাকে তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। কারণ টাইফয়েড জ্বরের তিন প্রকার লক্ষণ রয়েছে। এবং সেই লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে। উক্ত ব্যক্তি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কিনা। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ:
প্রথম স্তর
যখন কোন একজন ব্যক্তির শরীরে জ্বর আসবে। এবং সেই ব্যক্তির শরীর অতিরিক্ত মাত্রায় গরম হতে থাকবে। আর সেই ব্যক্তির মাথাব্যথা করবে, হাত-পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা অনুভব করবে। তখন বুঝে নিতে হবে যে, সেই ব্যক্তিটি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
দ্বিতীয় স্তর
ধীরে ধীরে সেই ব্যক্তির শরীরে জ্বরের মাত্রা আরও অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। কারণ টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর শরীরে সাধারণত 100 ডিগ্রী থেকে শুরু করে 104 ডিগ্রী পর্যন্ত জ্বর হয়ে থাকে। এবং যখন সেই ব্যক্তির শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে জ্বর থাকবে। তখন উক্ত ব্যক্তি খুব অলসতা অনুভব করবে। এবং সব সময় শুয়ে থাকতে চাইবে।
তৃতীয় স্তর
সর্বশেষ ধাপে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির শরীরে জ্বরের মাত্রা ক্রমাগত ভাবে বাড়বে এবং কখনও কখনও জ্বর কমে আসবে। এভাবে সেই ব্যক্তি দৈনিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্বর আসবে এবং আবার জ্বর কমে যাবে। যার ফলে সেই ব্যক্তির শরীর আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে। এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস নিতে অনেক সমস্যা হবে।
টাইফয়েড জ্বরের প্রতিকার
তো কোন কারনে যদি আপনি অথবা আপনার পরিচিত কোন কাছের মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায়। তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই ব্যক্তির সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। আর সেজন্য প্রথমেই আমি আপনাকে অভিজ্ঞ কোন ডক্টরের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিব। এবং সেই ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে পারলে। খুব সহজেই টাইফয়েড জ্বর থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।
তবে এবার আমি আপনাকে বেশ কিছু পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করব। যে গুলো মূলত অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা টাইফয়েড জ্বরের প্রতিকার হিসেবে বলে থাকে। ইতিপূর্বে আপনি জেনেছেন টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে। তবে চলুন এবার তাহলে সেই টাইফয়েড জ্বরের প্রতিকার গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
- উপরের আলোচনা থেকে আপনি জানতে পেরেছেন যে, টাইফয়েড জ্বর রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই অবশ্যই আপনাকে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।
- যখন আপনি আপনার শরীরের মধ্যে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ বুঝতে পারবেন। তখন অবশ্যই আপনি সব সময় পরিষ্কার এবং পরিছন্ন থাকার চেষ্টা করবেন।
- টাইফয়েড জ্বর হলে অবশ্যই আপনি ফুটানো পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এবং আপনি যেসব খাদ্য গ্রহণ করবেন। সেই খাবার গুলো অবশ্যই যেন গরম থাকে।
- এই জ্বরে আক্রান্ত হলে আপনি বাইরে থেকে আনা খাবার খাওয়ার দিকে একটু সচেতন থাকার চেষ্টা করবেন।
- টাইফয়েড জ্বর আক্রান্ত হলে সেই ব্যক্তি যেখানে থাকবে। সেই জায়গা টি অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এর পাশাপাশি উক্ত ব্যক্তি যে টয়লেট ব্যবহার করবে। সেই টয়লেট টি অনেক পরিষ্কার রাখতে হবে।
তো কোন কারনে যদি আপনার টাইফয়েড হয়ে থাকে। তাহলে আপনার প্রাথমিক অবস্থায় যেসব কাজ করা উচিত। সেই কাজ গুলো সম্পর্কে আমি উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তবে এইসব নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে।
টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন এর নাম
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা মূলত টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন নাম কি, সে সম্পর্কে জানতে চায়। তো যে মানুষ গুলো আসলে এই বিষয় টি সম্পর্কে জানতে চায়। তাদের বলবো যে, টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন এর নাম হলো, Paracetamol 150mg injection.
টাইফয়েড জ্বরের এন্টিবায়োটিক
দেখুন, টাইফয়েড জ্বর ভিন্ন মেয়াদী হয়ে থাকে। যেমন, কখনও এই জ্বর শরীর এর মধ্যে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। আবার কখনও কখনও টাইফয়েড জ্বর ৭ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। তো জ্বরের মাত্রা অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক প্রদান করতে হয়। যেহুতু আমি একজন আর্টিকেল রাইটার। সেহুতু আপনাকে বলবো, আপনি অবশ্যই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার আগে অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ নিবেন।
টাইফয়েড জ্বরের ঔষধের নাম
দেখুন আপনি ওষুধ খাওয়ার আগে ডক্টরের পরামর্শ নিবেন। আর টাইফয়েড জ্বরের ঔষধ এর মধ্যে অধিকাংশ সময় ইনজেকশন দেয়া হয়ে থাকে। তবে রোগীর চিকিৎসা আপনি যতো দ্রুত নিতে পারবেন। আপনার রোগীর টাইফয়েড জ্বর এর মাত্রা ততো কম হবে। আর আমি ডক্টর না, তাই কোনো ওষুধ এর নাম উল্লেখ করলাম না৷
টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত
যখন দেখবেন আপনার টাইফয়েড জ্বরের লক্ষন দেখা যাচ্ছে। কিংবা আপনার পরিচিত কেউ এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তাহলে আপনি লক্ষ্য রাখবেন। যেন জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো অপরিছন্ন পরিবেশে না থাকে। এবং রোগীর খাবার একটু গরম রাখার চেস্টা করবেন। এর পাশাপাশি ফুটানো পানি দেয়ার চেস্টা করবেন।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক ধন্যবাদ আপনার অনুসন্ধানের জন্য এবং আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য। এই আর্টিকেলে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ এবং প্রতিকার নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য অনেক বেশি হেল্পফুল হবে। আর স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো জানার থাকলে, অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।