অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি যদি অনলাইনে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করে থাকেন তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে নিন সহজেই।

অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

প্রশ্ন ২০) ঢাকা সিটি কলেজ। বরগুনার আমতলী উপজেলার ফারজানা ইয়াসমিন উচ্চশিক্ষিত ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও স্কুলশিক্ষক স্বামী শওকত বিয়ের আসরে যৌতুকের লােভ সামলাতে পারেনি। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ফারজানার বাবা যখন মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দেবেন সেই মুহুর্তে শওকতের ফুফু তাহমিনা বেগম যৌতুকের দাবি করেন এবং বলেন যে, যৌতুক না দিলে পাঁচ বছরেও মেয়েকে ঘরে তুলে নিবেন না। শ্বশুরবাড়ি যাবার মুহূর্তে তাদের এ দাবিকে রুচিহীন আখ্যা দিয়ে ফারজানা তার স্বামী শওকতকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ না করে | বরং নিজেই যৌতুকলােভী, ব্যক্তিত্বহীন শওকতকে তালাক দিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয় ।

ক. বিয়ের কত দিন পূর্বে শম্ভুনাথ সেন অনুপমকে দেখেছিল?

খ. ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই’- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের শওকত ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের সাদৃশ্য কতটুকু? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “কল্যাণী আর ফারজানার মতাে সাহসী মেয়েরাই পারে সমাজ থেকে কুপ্রথাকে দূর করে সমাজকে সুস্থ রাখতে”বিশ্লেষণ কর।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে চাপুন

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সমূহ

ক উত্তরঃ বিয়ের তিন দিন পূর্বে শম্ভুনাথ সেন অনুপমকে দেখেছিল।

খ উত্তরঃ “ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই”- উক্তিটি শম্ভুনাথ সেন বরপক্ষকে বিদায় জানানাের প্রসঙ্গে করেছিলেন।  বরপক্ষের যৌতুকের প্রতি অতিরিক্ত লােভ দেখে কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ সেন মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কারণ যাদের মনমানসিকতা এত নীচ যে, গহনার পরিমাপ ও মান যাচাইয়ের জন্য সেকরা নিয়ে আসে তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তােলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা শম্ভুনাথ সেনের ছিল না। তাই তিনি বিয়ের আগেই জোর করে বরপক্ষকে খাওয়া-দাওয়া করানাে এবং তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য গাড়ি ডেকে দিতে চান। বরের মামা বিষয়টিকে ঠাট্টা মনে করেন। আর এর জবাবেই শম্ভুনাথ সেন। ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করার ইচ্ছে নেই বলে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন।

সারকথা : কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ সেন লােভী এবং ব্যক্তিত্বহীনদের সাথে আত্মীয়তা করতে না চেয়ে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।

গ উত্তরঃ ব্যক্তিত্বহীনতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের শওকত ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। | স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য সবার আগে প্রয়ােজন সাহস ও মানসিক দৃঢ়তা। যাদের সেই সাহস ও দৃঢ়তা নেই তারা সহজেই অন্যের কাছে নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দেয়। চোখের সামনে অন্যায় হলেও তারা প্রতিবাদ করতে পারে না।

উদ্দীপকে যৌতুক লােভী ব্যক্তিত্বহীন বর এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আত্মমর্যাদা বজায় রাখা কনের কথা বলা হয়েছে। এখানে স্কুল শিক্ষক শওকতের সম্মতিতে তার ফুফু মেয়ের বাবার কাছে যৌতুক দাবি করেছে। দাবিকৃত যৌতুক পরিশােধ না করলে পাঁচ বছরেও মেয়ে ঘরে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বর পক্ষের এমন হীন মানসিকতার পরিচয় পেয়ে ফারজানা তার স্বামী শওকতকে তালাক দিয়েছে।

উদ্দীপকের শওকতের ব্যক্তিহীনতার এই দিকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের ব্যক্তিত্বহীনতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। গল্পে শম্ভুনাথ সেন তার মেয়ের গহনা পরীক্ষার বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অনুপম তার মামার হীনমানসিকতার পক্ষে মত দিয়েছে। সে নিজের শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের পরিচয় দিয়ে মামার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেনি।

সারকথা : উদ্দীপকের শওকত একজন ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ তাই সে ফুফুর সিদ্ধান্তের উপর কথা বলতে পারে না। অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ সেও মামার বিরুদ্ধে কথা বলেনি।

ঘ উত্তরঃ কল্যাণী আর ফারজানার মতাে সাহসী মেয়েরাই পারে সমাজ থেকে কু-প্রথাকে দূর করে সমাজকে সুস্থ রাখতে।”- মন্তব্যটি যথার্থ । | সমাজে নারীরা নানা দিক থেকে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়। সেসবের মধ্যে যৌতুক বা পণপ্রথা অন্যতম একটি। যৌতুক বা পণপ্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। এই প্রথার বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সচেতন না হলে এই প্রথা বন্ধ করা যাবে না।

তাই সবার উচিত যৌতুককে ‘না’ বলা। • উদ্দীপকে যৌতুক লােভী বরপক্ষকে যৌতুক না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ার ঘটনা প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে যৌতুকের দাবিদার

শওকতকে তার স্ত্রী ফারজানা যৌতুক না দিয়ে নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রেখেছে এবং একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে একজন শিক্ষিত সচেতন মানুষের পরিচয় দিয়েছে। এই বিষয়টি ‘অপরিচিতা’ গল্পে বিয়ের আসরে সেকরা নিয়ে মেয়ের গহনা পরীক্ষা করতে চাইলে মামার অন্যায়ের কোনাে প্রতিবাদ না করায় অনুপমের কাছে শম্ভুনাথ সেনের কন্যাকে বিয়ে না দেওয়ার ঘটনার

সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এখানে অনুপমের ব্যক্তিত্বহীনতার কারণে কল্যাণীও তাকে বিয়ে করতে সম্মত হয় না। • ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর ব্যক্তিত্ব আত্মমর্যাদবােধ এবং যুগ যুগ ধরে গেড়ে বসা ঘৃণ্য সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ

প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের ফারজানার মধ্যে অনুরূপ চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। অপরিচিতা’ গল্পে শম্ভুনাথ সেন এবং কল্যাণীর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও প্রতিবাদী আচরণ বরপক্ষের অন্যায়ের প্রতিবাদের সঙ্গে উদ্দীপকের ফারজানার শওকতকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত একসূত্রে গাঁথা। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। | us সারকথা : উদ্দীপকের ফারজানা লােভী ও ব্যক্তিত্বহীন স্বামীকে তালাক দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীও বিয়ে = না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক ও লােভী সমাজের মর্মমূলে আঘাত করেছে।

আপনি ইতিমধ্যে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ১টি পড়া সম্পূর্ণ করেছেন। চলুন তবে কমন উপযোগী আরও একটি দেখে নেওয়া যাক।

অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে চাপুন

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন

আমি আকাশে পাতিয়া কান
শুনেছি শুনেছি তােমারি গান
আমি তােমারে সঁপেছি প্রাণ
ওগাে বিদেশিনী

ক. বিনুদাদা কে?

খ. ‘প্রমাণ হইয়া গেছে, আমি কেহই নই’ কথাটির তাৎপর্যটুকু বুঝিয়ে বল।

গ. উদ্দীপকে কার মনের ভাবের মিল পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপস্থিত যেকোনাে একটি দিক বিশ্লেষণ কর।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সমূহ

ক উত্তরঃ বিনুদাদা হলেন ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়ক অনুপমের পিসতুতাে ভাই।

খ উত্তরঃ অনুপম নিজের অপারগতা সম্পর্কে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছে।

অনুপমের বিয়ের দিনে তার মামা কল্যাণীর শরীর থেকে সমস্ত গহনা খুলে সেকরাকে দিয়ে পরীক্ষা করান। শম্ভুনাথের কাছে বিষয়টি ভালাে লাগে না। তাই তিনি কৌশলে পাত্রপক্ষকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে তাদের চলে যেতে বলেন।

তিনি মনে করেন, মেয়েকে নকল গহনা দিয়ে বিয়ে দিতে পারে এমন কথা যারা ভাবতে পারে তাদের কাছে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার কোনাে মানেই হয় না। তাই তিনি বিয়ে ভেঙে দেন এবং পাত্র অর্থাৎ অনুপমকে একবারও জিজ্ঞেস করার প্রয়ােজন মনে করেননি। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে, পাত্রের আসলে এই বিষয়ে কথা বলার তেমন কোনাে ক্ষমতা নেই।

কারণ এত অনাচারেও অনুপম কোনাে প্রতিবাদ করেনি। আর শম্ভুনাথের এমন উপলব্বির কথাই গল্পকথক এভাবে তুলে ধরেছেন।

সারকথা : মামার কোনাে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার অক্ষমতা প্রকাশ করতে অনুপম প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছে।

গ উত্তরঃ উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়ক অনুপমের মনের ভাবের মিল পাওয়া যায় ।

মানুষের মন বড় বিচিত্র। এক সময় যাকে অবহেলা করা হয় সময়ের আবর্তনে তার প্রতিই আবার অনুরাগ জন্মে। তখন হয়তাে আর সময় থাকে না। তবু কেউ কেউ তাকে ঘিরেই স্বপ্ন রচনা করতে চায়, আবেগে আপ্লুত হয়। 

উদ্দীপকের কবি এক অপরিচিতা বিদেশিনীর পানে প্রাণ সঁপেছেন। সেই দূর থেকে তাকে ভালােবাসার কথা বলেছেন। বিদেশিনীর গান শুনে তিনি তার প্রেমে মজেছেন। এই ভাবটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মনােভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

অনুপম কল্যাণীকে বিয়ে করতে গিয়েও যৌতুকের কারণে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। তখন সে কল্যাণীকে সেভাবে অনুভব করতে না পারলেও সময়ের বিবর্তনে তার ভাবান্তর ঘটে। অপ্রত্যাশিতভাবে কল্যাণী সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে তাকে ভালােবাসতে শুরু করে। তাকে বিয়ে করতে চায়।

কল্যাণী তাতে রাজি না হলেও অনুপম ফিরে আসে না। তার ব্রতের সাথি হয়ে তাকে দূর থেকে ভালােবেসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের কথকের মনােভাব গল্পের অনুপমের মনােভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত।

সারকথা ; উদ্দীপকে কবি অচেনা বিদেশিনীকে মনপ্রাণ সপে দিয়েছেন। অপরিচিতা গল্পের নায়ক অনুপমও কল্যাণীকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালােবেসেছেন। এখানেই উভয় চরিত্রের মিল রয়েছে।

ঘ উত্তরঃ উদ্দীপকটিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের যৌতুকের পরিণতি ও তার বিরুদ্ধে প্রতিকারের দিকটি অনুপস্থিত।

আমাদের সমাজে যৌতুক একটি মারাত্মক ব্যাধি। বরের পিতা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার কাছ থেকে এমনভাবে যৌতুক গ্রহণ করে যে, কন্যার পিতা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। যৌতুক প্রথার কারণে নারীরা সমাজে অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হয়।

‘অপরিচিতা’ গল্পে যৌতুকের অন্ধকার দিক ও তার প্রতি দৃঢ় প্রতিরােধের বিষয়টি স্পষ্ট। গল্পে অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে  ঠিক হয়। কল্যাণীর পিতা যৌতুক নিয়ে বরপক্ষের বাড়াবাড়ির কারণে কন্যার ভবিষ্যতের চিন্তা না করে বিয়ে ভেঙে দেন।

কল্যাণীর সাথে একবার অনুপমের দেখা হয় এবং অনুপম তার প্রেমে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে কল্যাণী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সে নারী শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করে। অনুপম তার অপেক্ষায় থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

‘অপরিচিতা’ গল্পে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে বাবা-মেয়ের প্রতিবাদের দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু কথকের | প্রেমিকার প্রতি ভালােবাসার দিকটি ফুটে উঠেছে। কিন্তু গল্পের অন্যান্য দিক ফুটে ওঠেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা গল্পের যৌতুকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দিকটি অনুপস্থিত।

সারকথা : ‘অপরিচিতা’ গল্পে সমাজে যৌতুকের কালাে থাবা এবং এর করুণ পরিণতির দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। উদ্দীপকে শুধু প্রেমিকার প্রতি ভালােবাসার দিকটি উঠে এসেছে।

ধন্যবাদ অনুসন্ধান করে আমাদের সাইটে ভিজিট করার জন্য। আশাকরি আপনি অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর আমাদের সাইটে সহজেই খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে চাপুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button