কম্পিউটার ব্যবহারে চোখের যত্ন নেয়ার উপায়
যখন আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার অথবা মোবাইল ব্যবহার করি। তখন কিন্তু এই ধরনের ডিভাইস থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের চোখের উপর প্রচুর প্রভাব ফেলে। আর আমরা যত সময় পর্যন্ত এই ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো ব্যবহার করি। তখন কিন্তু আমাদের মাথা ব্যথা অনুভব হয়। মূলত আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার অথবা মোবাইলের মতো ডিভাইস গুলো কে ব্যবহার করি। তারা প্রত্যেকেই এই সমস্যার সাথে পরিচিত। আপনি কি জানেন, এই সমস্যার মূল কারণ কি। যদি আপনি না জেনে থাকেন তাহলে শুনুন, এর মূল কারণ হলো ভিশন সিনড্রোম। আর এর মাত্রা যখন অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তখন আমাদের চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়। এবং চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। এর পাশাপাশি চোখের মধ্যে ব্যথা এবং কিছুক্ষণ পর মাথার মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।
একটু ভেবে দেখুন, আপনি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করেন। তখন আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম চোখের পলক ফেলেন। অর্থাৎ একজন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে 15 থেকে 20 বার চোখের পলক ফেলে। কিন্তু যখন আপনি কম্পিউটার ব্যবহার করবেন। তখন এই চোখের পলক ফেলার পরিমাণ অনেক অংশে কমে যায়। আর এর কারনে মূলত ভিশন সিনড্রোম শুরু হয়। যার কারণে আমাদের চোখ ব্যথা সহ মাথা ব্যাথা অনুভূত হয়ে থাকে। মূলত একজন মানুষ হিসেবে আপনি আপনার চোখের পাতা যত বেশি ফেলবেন। আপনার ব্রেন এর মধ্যে থাকা লেয়ার গুলো তত বেশি রিফ্রেশ হতে থাকবে। যার ফলে মাথা ব্যথার মতো সমস্যা গুলোর পরিমাণ অনেক কমে যাবে।
আর সে কারণে মূলত আজকের আর্টিকেলে আমি কম্পিউটার ব্যবহারে চোখের যত্ন নেয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। মূলত যারা রেগুলার কম্পিউটার ব্যবহার করে। তাদের অবশ্যই চোখের যত্ন নেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, কিভাবে কম্পিউটার ব্যবহারে চোখের যত্ন নিতে হয়। তো আপনি যদি চোখের যত্ন নেওয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আপনাকে নিচের আলোচিত আলোচনায় নজর রাখতে হবে। তো আর দেরি না করে চলুন সরাসরি মূল আলোচনা তে ফিরে যাওয়া যাক।
Table of Contents
কম্পিউটার ব্যবহারে চোখের যত্ন নেয়ার উপায়
দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ ব্যবহার করার ফলে আমাদের চোখের যে ক্ষতি হয়। সে সম্পর্কে আমি উপরে স্বল্প আকারে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তবে আপনি চাইলে এই ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন। আর সেজন্য আপনাকে সঠিক উপায় গুলো অনুসরণ করে চোখের যত্ন নিতে হবে। তো এবার আমি কম্পিউটার ব্যবহারে চোখের যত্ন নেয়ার উপায় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার এই উপায় গুলো অবশ্যই আপনার মেনে চলা উচিত।
প্রতি ২০ সেকেন্ড অন্তর অন্তর চোখের ব্যায়াম করুন
দেখুন, উপরে আমি আপনাকে একটা কথা বলেছি। আর সেই কথাটি হলো যে আমরা যখন অধিকাংশ সময় কম্পিউটার ব্যবহার করি। তখন আমরা স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক কম চোখের পাতা ফেলি। কিন্তু এই কাজটি আমাদের কখনোই করা উচিত নয়। বরং আমাদের নিয়ম মেনে প্রতি ২০ সেকেন্ড পরে কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নিতে হবে। এবং দূরের কোন বস্তু কে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকতে হবে। এতে করে আপনার চোখের এক প্রকারের বিশ্রাম হবে। এবং আপনি পরিমিত পরিমাণ চোখের পলক ফেলতে পারবেন।
সহজ ফন্ট ব্যবহার করুন
দেখুন আমরা আমাদের কম্পিউটার এর মধ্যে অধিকাংশ সময় বিভিন্ন ধরনের স্টাইলিশ ফন্ট ব্যবহার করে থাকি। মূলত এই ধরনের ফন্ট গুলো কে সহজে পড়া যায় না। সে কারণে সেই ফন্ট এর মধ্যে কি লেখা আছে, সে গুলো দেখার জন্য আমাদের অপলক দৃষ্টিতে কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে হয়। মূলত এর ফলে আমরা নিজের অজান্তেই নিজের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলি। কিন্তু আমাদের উচিত কম্পিউটারের মধ্যে সহজ ফন্ট ব্যবহার করা। যাতে করে কম্পিউটার স্ক্রিনে থাকা লেখা গুলো কে আমরা খুব সহজেই ধরতে পারি। এবং বুঝতে পারি যে সে গুলো তে কি কি লেখা আছে। এর ফলে কিন্তু আমরা আমাদের চোখের ক্ষতি অনেকটাই এড়াতে পারবো।
পরিমিত পরিমানে চোখের পাতা ফেলুন
যখন আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করি, তখন কিন্তু আমরা স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক কম পরিমাণে চোখের পাতা ফেলি। আর যদি আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে চোখের পাতা কম ফেলেন। সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনার চোখ ক্রমাগত ভাবে শুষ্ক হয়ে যাবে। এর ফলে মূলত বেশি সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করলে আমাদের চোখের মধ্যে এক ধরনের কাটাকাটা ভাব অনুভূত হয়। কিন্তু আপনি যদি এই নিয়ম মেনে কম্পিউটার ব্যবহার করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে চোখের পলক ফেলেন। সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনার চোখ আর শুষ্ক হবে না। তাই অবশ্যই কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় আপনি এই বিষয়টির দিকে যথেষ্ট পরিমাণে খেয়াল রাখবেন।
একটানা কাজ করবেন না
আমরা অধিকাংশ মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কম্পিউটারের মধ্যে কাজ করি। তবে এই কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের একটু বিশ্রাম নেয়া উচিত। যাতে করে আমাদের ব্রেন এবং চোখ দুটোই সুস্থ থাকে। সেজন্য আপনি একটা রুটিন তৈরি করবেন। এবং সেই রুটিন অনুযায়ী বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন আপনি প্রতি এক ঘণ্টা পরে বিশ মিনিট করে রেস্ট নিবেন। আর আপনি যদি এভাবে বিশ্রাম নিতে পারেন। তাহলে কিন্তু আপনার চোখ শুষ্ক হবে না। এবং আপনি কোন প্রকার মাথাব্যথা অনুভব করবেন না। আর সেজন্য অবশ্যই আপনাকে প্রতি সময় অন্তর অন্তর বিশ্রাম নিতে হবে।
চোখের পরীক্ষা করুন
যখন আপনি দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করবেন। এবং এই কাজ করার পরিমাণ যখন অনেক পরিমাণে বেড়ে যাবে। তখন আমাদের সবার উচিত একবার হলেও রোগের পরীক্ষা করানো। কারণ আপনি যদি চোখের পরীক্ষা করান। সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার কোন কোন পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে চোখের যত্ন নেয়া উচিত। কিন্তু আপনি যদি কোন প্রকার পরীক্ষা না করে বছরের পর বছর এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করেন। সেক্ষেত্রে কিন্তু একটা সময় আপনি বড় বিপদের সম্মুখীন হবেন। তাই অবশ্যই আপনাকে একবার হলেও চোখের পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।
কাজের জায়গা বদল করুন
দেখুন আপনি বর্তমান সময়ে যে স্থানে বসে কম্পিউটারে কাজ করেন। আপনাকে সেই স্থান মাঝে মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি যদি আপনার পড়ার টেবিলে বসে কম্পিউটারে কাজ করেন। সেক্ষেত্রে কয়েক মাস অন্তর অন্তর এই জায়গা কে পরিবর্তন করতে হবে। এবং আপনি যে স্থানে বসে কম্পিউটারে কাজ করবেন। সেই স্থানের চেয়ার টি হাইড্রোলিক হলে ভালো হবে। আর এক্ষেত্রে আপনার একটা বিষয় মাথায় রেখে চলা উচিত। আর সেই বিষয় টি হলো যে, আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিন যেন চোখের নিচে অবস্থান করে থাকে। অর্থাৎ আপনার চেয়ার টি যেন একটু উঁচু জায়গায় থাকে। যাতে করে আপনি নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে পারেন।
অন্ধকার স্থানে কাজ করবেন না
আমরা অনেক সময় কম্পিউটারে বসে কাজ করার সময় ঘরের সব লাইট বন্ধ করে রাখি। মূলত আপনি যদি এই কাজ টি করেন। তাহলে কম্পিউটার থেকে আসা রশ্মি আপনার চোখের অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলবে। সেজন্য আপনি যখন কম্পিউটার এর মধ্যে বসে কাজ করবেন। তখন অবশ্যই আপনার ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা রাখবেন। এবং ভুল করেও সব লাইট বন্ধ করে কম্পিউটারে কাজ করবেন না।