ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি সেরা উপায় ২০২২
সারা পৃথিবীতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইউটিউব সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এর ব্যবহার মাত্রা বুঝার জন্য একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ঘন্টার ভিডিও ইউটিউবে নিয়মিত আপলোড হচ্ছে এবং আমরা প্রতিদিন প্রায় ১ বিলিয়ন ঘণ্টার বেশি সময় ইউটিউব দেখি। ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা পুরো পৃথিবীতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও ইউটিউব জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। ইউটিউব বাংলাদেশের অন্যতম বিনোদনের একটা মাধ্যম হিসেবে সাড়া সৃষ্টি করেছে। আজকের পোষ্টে আমরা ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি সেরা উপায় ২০২২ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ইউটিউব শুধুমাত্র মানুষকে বিনোদন দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, সেই সঙ্গে বহু মানুষের জীবিকার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে আসছে। আপনার ভিতরে যদি কোন সুপ্ত প্রতিভা থাকে, তাহলে সেই প্রতিভা আপনি ভিডিও আকারে ইউটিউবে আপলোড দিয়ে কিছু শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন।
ভালো মানের প্রতিভা ইউটিউবে শেয়ার করলে খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাল হওয়া যায়। আপনি চাইলে ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন। বাংলাদেশি অসংখ্য ছোট-বড় অনেক ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যারা মাসে হাজার হাজার টাকা খুব সহজে ইউটিউব থেকে উপার্জন করছে।
Table of Contents
ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়
আপনি যদি একজন কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে কাজ করতে চান, তাহলে ভালো মানের কোনো প্রফেশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর কোর্স করে নিজের ক্যারিয়ার করে তুলতে পারেন। নিজের এই কাজের প্রতি আগ্রহ ও প্যাশন থাকলে আপনি এখনই শুরু করতে পারেন।
আজকের এই আর্টিকেলের মূলত আলোচনার বিষয়বস্তু হবে ইউটিউব থেকে আয় করার সেরা ৫টি উপায় । যারা নতুন ইউটিউবার আছেন তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর আজকেই পেয়ে যাবেন। এখন চলুন শুরু করা যাক মূল আলোচনা:
গুগল এডসেন্স থেকে আয়
ইউটিউব থেকে আয় করার অন্যতম সেরা ও প্রধান উপায় হচ্ছে গুগল এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন থেকে আয় করা। একজন সফল ইউটিউবার এর মূল ইনকামের এর অধিকাংশ বিজ্ঞাপন থেকে। এজন্য অধিকাংশ ইউটিউবাররা ইউটিউব ভিডিওতে দেখানো বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে থাকেন।
গুগল এডসেন্স গুগলের একটা এড নেটওয়ার্ক। যেটা ব্যবহার করে ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ করার মাধ্যমে আয় করা যায়। গুগল এডসেন্স বর্তমানে সবার কাছে সোনার হরিণ হিসেবেই বেশি পরিচিত।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর আপনি যদি ইউটিউব এর শর্তগুলো পূরণ করতে পারেন, তবে আপনার চ্যানেলটি মনিটাইজ করার মাধ্যমে আয় শুরু করতে পারবেন। এজন্য আপনার চ্যানেলে অবশ্যই নির্দিষ্ট সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার ও নির্দিষ্ট ঘন্টা ওয়াচটাইম থাকা আবশ্যক।
ইউটিউব এর বেঁধে দেয়া শর্ত পূরণ করতে পারলে আপনার চ্যানেলটি তখন মনিটাইজ পেয়ে যাবে। ইউটিউব এর শর্ত পূরণ করার পর আপনাকে গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর গুগল এডসেন্স কর্তৃপক্ষ আপনার চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করে সবকিছু ঠিক থাকলে অনুমোদন করিয়ে দিবে।
গুগল এডসেন্সের দেখানো বিজ্ঞাপনগুলি মূলত আমরা ভিডিও দেখার শুরুতে, মাঝে ও শেষে দেখতে পায়। প্রকৃতপক্ষে ইউটিউব থেকে আয় করা এখানেই সূচনা হয়। প্রত্যেকটা বিজ্ঞাপন থেকে কী পরিমান আয় হবে সেটা গুগল কর্তৃক নির্দিষ্ট। গুগল কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করে ইউটিউবারদের উপার্জন বন্টন করে দিয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কোন ইউটিউবারই বলতে পারবেনা তার কত টাকা বিজ্ঞাপন থেকে আয় হবে।
গুগল ইউটিউব থেকে কী পরিমান আয় করছে সেটা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারবে না। তবে অনুমান করে বলা যেতে পারে, প্রতি হাজার ভিউয়ে ৩-১০ ডলার আয় করতে পারে।
ইউটিউব এর একটা অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে, আপনার যদি কোন একটা ভিডিও ভাইরাল হয়, তবে প্রতিদিন সেই ভিডিও থেকে আয় হতেই থাকবে। আপনি যতক্ষণ ইউটিউব চ্যানেলে সেই ভিডিও ডিলিট না করবেন ততক্ষণ ঐ ভিডিও থেকে আয় হবেই।
ইউটিউব এ বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য আপনাকে আলাদা কোন কিছু করার প্রয়োজন পড়বে না। আপনি ইউটিউব চ্যানেলে গুগল অ্যাডসেন্স মনিটাইজ তারপর এডস চালু করে দিলে অটোমেটিকভাবে ইউটিউব বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে। গুগল আপনার ভিডিওর টাইটেলের কিওয়ার্ডগুলো বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাবে।
যদিও আমরা ইউটিউব থেকে ইনকাম করা খুব সহজ মনে করে থাকি তবে সেটা মোটেও অতটা সহজ নয়। আপনার কনটেন্ট যদি হাই কোয়ালিটি হয় তবে আপনি ইউটিউব থেকে সফলতা লাভ করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
অনেক সময় গুগল অ্যাডসেন্স থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে আয় করা সম্ভব হয় না। এজন্য অধিকাংশ ইউটিউবাররা গুগল এডসেন্স এর পাশাপাশি এফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে আয় করে থাকেন। এটি থেকে আয় করার অন্যতম জনপ্রিয় ও সেরা আর একটি উপায়।
বর্তমানে জনপ্রিয় অনেক ইউটিউবার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্রচুর পরিমাণ টাকা উপার্জন করছেন। গুগল এডসেন্স এর থেকেও বেশি পরিমাণ টাকা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা লিংক শেয়ার করে ইনকাম করা যায়। এফিলিয়েট মার্কেটিং বা লিংক শেয়ার হল এমন একটা পদ্ধতি যেখানে কোম্পানির সঙ্গে আপনার একটা চুক্তি হবে। চুক্তি মোতাবেক আপনি আপনার ভিডিওতে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির লিংক শেয়ার করবেন।
আপনার শেয়ার করার লিংক থেকে যত পরিমান বিক্রয় হবে তার উপরে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন শতকরা হারে আপনাকে প্রদান করা হবে। এটা মূলত চুক্তিবদ্ধ মাধ্যমে অন্য কোন কোম্পানির পণ্য বা সেবা নিজের ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে বিক্রয় করা। এভাবে কোম্পানির মার্কেটিং হবে এবং আপনার ও সেইসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ লাভ হবে। কোম্পানি ও চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি উভয়ই লাভবান হবে।
তবে এই কাজটি করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। কারণ এটা মূলত মার্কেটিং এর কাজ। শুধু মার্কেটিং করলে কাজ হবে না, পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির পণ্য বিক্রয়ের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। কেননা এখানে পণ্য বিক্রয় করতে না পারলে কোন রকম আয়ের সম্ভাবনা নেই।
তাই আপনাকে আপনার ভিডিও সুন্দর করে এডিট করে চমকপ্রদ উপায়ে আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকটি শেয়ার করে দিতে হবে। আপনি যদি সুকৌশলে কাস্টমারদের মাঝে ঐ পণ্য বা সেবার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেন তাহলে সফল হবেন।
প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয়
একজন ইউটিউবার এর চ্যানেলে যদি অনেক পরিমাণে সাবস্ক্রাইবার থাকে তবে খুব সহজ আপনি নির্দিষ্ট কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। ইউটিউব থেকে আয় করার অন্যতম সেরা ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয় ।
বিশেষ করে আপনি চাইলে জনপ্রিয় চ্যানেলটির লোগো দিয়ে টি-শার্ট চাবির রিং, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করে আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারদের নিকট বিক্রি করতে পারবেন। অনেকে আছেন যারা পড়াশোনা বিষয়ক ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেন। একটা সময় পর পড়াশোনা সংক্রান্ত বই লিখে সাবস্ক্রাইবারদের নিকট বিক্রি করেন।
এই উপায়ে এর মাধ্যমে বেশিরভাগ ইউটিউবার প্রচুর টাকা উপার্জন করছে বর্তমানে। কারণ আপনি জনপ্রিয় হতে পারলে এর থেকে আয় করার সহজ কোন উপায় থাকবেনা।
স্পন্সরশিপ থেকে আয়
যেসব ইউটিউবারদের অনেক বেশি ফলোয়ার রয়েছে তারা স্পন্সরশিপ থেকে অনেক বেশি আয় করতে পারে। বড় বড় জনপ্রিয় ইউটিউবার খুব সহজে আয় করতে পারে এই মাধ্যম থেকে। এটা একটা জনপ্রিয় ও সেরা উপায় তাদের জন্য। এখানে মূলত অন্য কোন কোম্পানি তাদের প্রচারণার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকবে। আপনার কাজ হবে আপনার তৈরীকৃত ভিডিওর মাধ্যমে তাদের কোম্পানির প্রচারণা চালানো।
অনেক সময় স্পন্সরশিপ থেকে ভালো পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়। এজন্য আপনাকে আপনার ভিডিওতে মূলত এমন ভাবে তাদের কোম্পানির পরিচিত করাতে হবে যাতে কোম্পানির সুনাম বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কাজের সাথে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন দেয়ার অনেক মিল রয়েছে। মূলত টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেওয়ায়। শুধু পার্থক্য হল টেলিভিশন চ্যানেল এর পরিবর্তে ইউটিউব চ্যানেলে এই বিজ্ঞাপনটি দেখানো হবে।
যাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিউ হয়ে থাকে তারা এই মাধ্যম থেকে আয় করার সুযোগ বেশি পেয়ে থাকে। এভাবে অন্য কোম্পানির প্রচার প্রচারণা করে অনেকে গুগল অ্যাডসেন্সের থেকে বহুগুণে বেশি টাকা উপার্জন করছে।
প্রোডাক্ট রিভিউ করে আয়
আপনি চাইলে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিতে প্রোডাক্ট রিভিউ ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। এখানে মূলত কোম্পানি আপনাকে একটা প্রোডাক্ট দিবে। আপনাকে সেই প্রোডাক্টের সুন্দর একটা রিভিউ ভিডিও তৈরী করে আপলোড করে দিতে হবে।
প্রোডাক্ট রিভিউ করে আয় ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার সুন্দর একটা উপায়। আপনাকে আপনার ইউটিউব চ্যানেল সম্পর্কিত কোন প্রোডাক্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর কোম্পানি আপনাকে একটা নমুনা প্রডাক্ট রিভিউ করার জন্য বিনামূল্যে আপনাকে দিবে।
আপনার চ্যানেলটি যদি কোন একটা বিষয় সম্পর্কিত হয়ে থাকে, তবে বিভিন্ন রকম কোম্পানি থেকে আপনি অফার পাবেন। এজন্য আপনার চ্যানেলটিতে অবশ্যই একটি বিষয়ের উপর ভিডিও আপলোড দিতে হবে।
আমাদের কথা
আশা করছি ইউটিউব থেকে আয় করার সেরা ৫ টি উপায় জানতে পেরেছেন। আপনি যদি নতুন একজন ইউটিউবার হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে উপরের উপায়গুলো থেকে একটা উপায় বাছাই করে নিতে হবে। প্রথমাবস্থায় সবগুলো উপায় নিয়ে আয় করার চেষ্টা করা বেশি ভালো হবে না।
পৃথিবীতে অসংখ্য ইউটিউবার উপরের উপায়গুলো থেকে প্রতিমাসের লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। আপনি যদি ইউটিউবকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান, তাহলে আজই ইউটিউবিং শুরু করে দিতে পারেন। উল্লেখিত যে কোন একটা উপায় থেকে আয় করা শুরু করতে পারেন প্রথম অবস্থায়।