ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায়

একজন শিক্ষিত মানুষের জীবনে ছাত্র জীবন খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপটি সঠিকভাবে অতিক্রম করলে পারলে পরবর্তী জীবনে খুব সহজে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়। চাকরি জীবনের সফলতা পুরোপুরি ছাত্র জীবনের কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল। আজকের পোষ্টে আলোচনার বিষয় ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় [সেরা ১১টি মেথড] নিয়ে বিস্তারিত। 

ছাত্রজীবনে যদি প্রতিটা মুহূর্ত সঠিকভাবে কাজে লাগানোর না যায় তবে সেই খেসারত দিতে হয় পরবর্তী জীবনে। এজন্য আমাদের সবাইকে ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকতে হবে। কেননা ছাত্র জীবনে সফল হতে না পারলে পরবর্তী জীবনের সফলতা লাভ করতে অনেক খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।

যে পরিস্থিতি একটা মানুষের জন্য দুর্বিষহ হতে পারে। এজন্য ছাত্র হিসেবে প্রত্যেককে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে ছাত্র জীবন থেকে পরবর্তী জীবনে অগ্রসর হওয়া উচিত। ছাত্র  জীবনে অবশ্য করণীয় কাজগুলি সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারলে জীবনের পরবর্তী ধাপে সহজে অতিক্রম করা যায়। এজন্য আমাদের ছাত্র জীবন থেকে অনেক বেশি সচেতন ও সতর্ক থেকে প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায়

আজকে আমাদের আলোচনার মূল টপিক হল ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় বা কিভাবে ছাত্র জীবনে সফল হওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের এই আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে আশাকরি জানতে পারবেন ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় সম্পর্কে মূল আলোচনা।

১. সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা 

ছাত্র জীবনে অবশ্য করণীয় কাজগুলোর তালিকা তৈরি করে সেগুলো পরিকল্পনামাফিক সম্পাদন করার চেষ্টা করতে হবে। বলা হয়ে থাকে যে কোন কাজ করার পূর্বে পরিকল্পনা করলে সেটা সে কাজের অর্ধেক করা সম্পাদন হয় বলে ধরা হয়।

ছাত্র জীবনে আপনাকে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন ও পরিকল্পনা। আপনি যদি আপনার কর্তব্যগুলো পরিকল্পনামাফিক সম্পাদন করতে পারেন তাহলে ছাত্র জীবনে আপনি একজন সফল ছাত্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি আপনাকে আরও কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর অবশ্যই সেগুলো পরিকল্পনা মাফিক করতে হবে। তাহলে কাজের প্রতি আপনার মনোযোগ ও গতি বৃদ্ধি পাবে। 

২. দৈনিক রুটিন তৈরি করা 

ইতিপূর্বে আমরা পরিকল্পনা তৈরি করা সম্পর্কে বলেছি। সেটা ছিল ছাত্র জীবনে আপনার অবশ্যকরণীয় কাজগুলোর সামগ্রিক পরিকল্পনা। সামগ্রিক পরিকল্পনাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে সম্পাদন করলে খুব সহজে সেটা কার্যকরীভাবে করা সম্ভব হয়।

এজন্য আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মের একটা সুন্দর রুটিন তৈরি করে ফেলা আবশ্যক। আপনার তৈরীকৃত রুটিনে অবশ্যই আপনার সারাদিনের কাজ কর্মের তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেটা যেকোন কাজ হোক না কেন। শুধু পড়াশোনা নয় পাশাপাশি সকল ধরনের কাজের সময় ও তালিকা তৈরি করে নিয়ে সম্পাদন করতে হবে। তাহলে আপনি আপনার লক্ষ্যে খুব দ্রুত পৌছাতে পারবেন।

রুটিন আপনার দৈনন্দিন জীবনে সময়ের অপচয় রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটা একটা সময় আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।

৩. মাল্টি টাস্ক পরিহার করা

মাল্টি টাস্ক হলো একই সময়ে একাধিক কাজে নিয়োজিত থাকা। এই আধুনিক যুগে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় মোবাইল চাপাচাপি বা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত থাকে। যেটা একজন শিক্ষার্থীর থেকে মোটেই কাম্য নয়। একপাশে বই খাতা আর অন্যপাশে মোবাইল থাকলে কখনো পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না।

হাতের কাছে মোবাইল সরঞ্জাম থাকলে আপনার মন অনলাইনে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যাবে। আপনি অজান্তে ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের ভিডিও দেখতে পারেন অথবা আপনার প্রিয় কোন বন্ধুর সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং বা কথা বলা শুরু করতে পারেন।

যার ফলে আপনার পড়াশোনা সম্পূর্ণ হবে না। চ্যাটিং করা বা ভিডিও দেখার পাশাপাশি পড়াশোনা করলে সেটা কার্যকরী হয় না। এজন্য পড়ার সময় এগুলো সব সময় দূরে রাখতে হবে। 

৪. বড় পাঠকে ছোট ছোট করে পড়া 

ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় বলতে বুঝি ছাত্র জীবনের কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করা। ছাত্র জীবনের কর্তব্যগুলোর মধ্যে প্রথমে রয়েছে পড়াশোনা করা। আর এই পড়া যখন আপনার সহজে মুখস্ত হবে না তখন আপনি চাইলে বড় কোন পড়ার পাঠকে ছোট্ট ছোট্ট ভাগে ভাগ করে সেটা পড়তে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ : আপনি একটা প্যারাগ্রাফকে ছোট ছোট তিন-চারটি অংশে ভাগ করে মুখস্ত করতে পারেন। এতে দ্রুত পড়া মুখস্থ করে পাঠ সম্পন্ন করা যায়।

৫. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো

একজন মানুষের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য উপাদান হলো ঘুম। কারণ পরিপূর্ণ ঘুমের অভাবে মানুষের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আপনি দুর্বল বা রোগা পাতলা হতে পারেন।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে পড়া মুখস্ত করতে ব্যর্থ হবেন। এছাড়া অনেকদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে। এতে করে আপনার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটবে। ছাত্র জীবনে সফল হতে চাইলে আপনাকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ কম নিশ্চিত করতে হবে।

৬. ক্লাসে নোট তৈরি করা 

একজন সফল শিক্ষার্থীরা অন্যতম একটা সেরা বৈশিষ্ট্য হলো নোট তৈরি করা। আপনার ক্লাসে শিক্ষক যে টপিক পড়াবে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আপনাকে অবশ্যই নোট করতে হবে। নোট করার সময় স্যারের কথাগুলো অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে ও বুঝতে হবে। নতুবা নোট করে কোন লাভ হবে না।

৭. নিয়মিত পড়াশোনা করা

ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার অন্যতম সেরা ও কার্যকরী উপায় হল ছাত্র জীবনে নিয়মিত প্রতিদিন পড়াশোনা করা। এই উপায় ছাড়া ছাত্র জীবনে কেউ সফলতা লাভ করতে পারবে না। পড়াশোনা অবশ্যই করতে হবে।

পড়াশোনা করার বিভিন্ন কৌশল রয়েছে সেগুলো অবলম্বন করে কম সময়ে আপনি সফল হতে পারেন। সারাদিন পড়ার টেবিলে বসে থাকাকে আমি কখনো সমর্থন করি না। আপনি চাইলে সুকৌশলে আপনার পড়া সম্পন্ন করতে পারেন। তবে পড়া আপনাকে সম্পাদন করতেই হবে।

৮. পড়ার সঠিক স্থান নির্বাচন করা 

পড়াশোনা করার জন্য প্রয়োজন সঠিক ও নিরিবিলি স্থান যেটা আপনার পড়ার প্রতি মনোযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। এজন্য আপনাকে এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে পড়াশোনা থেকে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এমন কোন কিছু থাকবে না।

সব সময় মানুষজন থেকে বিচ্ছিন্ন স্থান নির্বাচন করতে হবে। আশেপাশে লোকজন থাকলে পড়াশোনা অনেক সময় বিঘ্নিত হয়। তাই এমন একটি কক্ষ নির্বাচন করবেন যেখানে পর্যাপ্ত পরিমান আলো ও বাতাস রয়েছে।

৯. গ্রুপ করে পড়াশোনা করো 

পড়াশোনা করার জন্য কোন একটা গ্রুপ তৈরি করে পড়লে সেটা অনেক বেশি কার্যকরী হয়। কয়েকজন মিলে একটা গ্রুপ তৈরি করে পড়াশোনা করলে সেই পড়া অনেক বেশি দিন মনে থাকে।

কোন পড়া একজনের বুঝতে সমস্যা হলে কোন একজনকে প্রশ্ন করে সেটা সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়। এভাবে আলোচনা করে কয়েকজন পড়াশোনা করলে অনেক বেশী কার্যকরী হবে।

১০. প্রশ্ন করার অভ্যাস 

আপনি যদি কোন একটা টপিক ভালোভাবে বুঝতে চান তবে অবশ্যই সে বিষয়ে আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে। একটা টপিক বোঝার সময় আপনার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরি হবে। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হয়তো বা আপনি পারবেন না।

এজন্য শ্রেণী শিক্ষক কিংবা বন্ধুবান্ধবকে প্রশ্ন করে সেই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করতে হবে। তাই আপনার ভিতরে ছাত্র অবস্থায় অন্যজনকে প্রশ্ন করার দক্ষতা তৈরি করতে হবে। অনেকে শ্রেণিকক্ষে  ভয়ে কিছু না বুঝলেও শিক্ষককে প্রশ্ন করে না।

১১. বক্তৃতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা 

ছাত্রজীবনকে সফলকাম করার জন্য অন্যতম সেরা দক্ষতা হল বক্তৃতা ও নেতৃত্ব দেওয়া। শুধু ছাত্রজীবনে নয় যদি আপনি চাকরি জীবন কিংবা যেকোন সময় নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে দেখতে চান তবে এই দুটি গুণ আপনার মধ্যে থাকা আবশ্যক।

পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রজীবনে দুটি গুণ আপনাকে অর্জন করতে হবে। তাহলে জীবনে আপনাকে কখনো আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

আমাদের কথা 

প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর মধ্যে সফল হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সেই সক্ষমতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থী তার ছাত্র জীবনে খুব সহজে সফলতা অর্জন করতে পারবে।

আশা করছি আজকের আর্টিকেল ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায় আপনার অনেক বেশি ভালো লেগেছে। উপরের উপায়গুলো অনুসরণ করলে আমি আশা করি আপনি ছাত্র জীবনে সফল হতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button