মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপকারিতা সমূহ সম্পর্কে
মোবাইল ফোন আমরা প্রায় সকলেই ব্যবহার করে থাকি। কেউ হয়তো বা প্রয়োজনে ব্যবহার করে, আবার অনেকে অপ্রয়োজনে সারাক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে। একবিংশ শতাব্দীর এই দিনে মোবাইল ফোন ছাড়া একটা মুহূর্ত কল্পনা করা যায় না। তাই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নিন মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তবে শুরু করি।
মোবাইল ফোন এখন প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এক অপরিহার্য জিনিসে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোন ছাড়া একটা দিনও অতিক্রম করতে পারি না এখন। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুফল এর পাশাপাশি রয়েছে অত্যাধিক কুফল। এসব ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতি করে থাকে।
Table of Contents
মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপকারিতা
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কুফল থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। এজন্য প্রত্যেকেরই জানা উচিত হবে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো। আজকে এই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পারবেন মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহ।
মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ার ভয়
আপনি যদি একটা নতুন মোবাইল ফোন করে করে থাকেন, ঠিক তখন থেকে আপনার মনের মধ্যে একটা ভয় সবসময় কাজ করবে। সেটা হলো মোবাইল ফোনটি হারানোর ভয়। এটা এক ধরনের মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হবে।
যেটাকে সাইকোলজিস্টরা নাম দিয়েছে ‘নোমোফোবিয়া’; যার পুরো নাম হল ‘নো মোবাইল-ফোন ফোবিয়া’। এই মানসিক ব্যাধির শিকার হয়েছে যুক্তরাজ্য ও ভারতের অধিকাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা। মনোবিজ্ঞানীরা তাই সবাইকে মোবাইল নির্ভরতা কমিয়ে আনতে বলেছে।
স্লিপ টেক্সটিং সমস্যা
এই সমস্যা মূলত যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অতিরিক্ত টেক্সট মেসেজিং করে থাকেন তাদের মধ্যে হয়ে থাকে। এটি মূলত ঘুমের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা করে থাকে।
মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা কখন কাকে কি মেসেজ দিয়ে থাকে তা মনে থাকে না, কিন্তু তার মাথায় থাকে। যার ফলে ঘুমের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত নম্বরে নিজের অজান্তেই মেসেজ চলে যায়।
সাইকোলজিস্টরা মনে করেন অতিরিক্ত মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা ও মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে এই সমস্যা হতে পারে।
চোখের সমস্যা
মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে ক্ষীণদৃষ্টি এই সমস্যা হতে পারে। কারণ মোবাইল ফোনগুলো মূলত অল্প দূরত্বে ব্যবহার করা হয় যেটা একসময় ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
মোবাইল ফোন ব্যবহার করার চেয়ে বই বা পত্রিকা পড়ার সময় দূরত্ব বেশি থাকে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন মোবাইল ফোন বেশি সময় ব্যবহার না করতে। বয়স বিবেচনায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সর্তকতা অবলম্বন করতে বলেছেন।
কানে কম শোনা
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে কানও সমস্যার সম্মুখীন হয়। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অতিরিক্ত হেডফোন দিয়ে গান শুনলে কানের সমস্যা হতে পারে।
খুব বেশি হেডফোন দিয়ে গান শুনলে উচ্চস্বরে একটা সময় কান একদম বধির হয়ে যাবে।
শরীরের অস্থিগুলোর ক্ষতি
খুব বেশি মোবাইল টিপাটিপি করলে একটা সময় শরীরের বিভিন্ন অস্থি বা জয়ন্টে ব্যথা অনুভব হতে পারে। শুয়ে বা বসে অত্যাধিক মর্ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানারকম সমস্যার তৈরি হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানারকম অসুবিধার দেখা পাওয়া যেতে পারে।
শুক্রাণু কমে যেতে পারে
হ্যাঁ আপনি সত্যই শুনছেন! অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয় মোবাইল ফোন থেকে।
যেটা একসময় ক্যান্সার রোগে রূপান্তর হতে পারে। শরীরের তরঙ্গ কোষের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া প্রজননতন্ত্রের ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
মুঠোফোন থেকে এরকম নির্গত রশ্মিগুলো আমাদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। যৌনচিকিৎসকদের মতে আমাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে খুব সতর্ক হতে হবে।
সময় অসময় রিংটোন বাজা!
সময়ে অসময়ে রিংটোন বাজার ফলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগতা বা বিষণ্নতা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে! আচমকা রিংটোন বাধার ফলে মানুষের মধ্যে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত পরিমাণ মোবাইল টিপাটিপির ফলে সমস্যা হয়ে থাকে যেটা অনেক ব্যবহারকারীরা টেরও পান না।
অনিদ্রাজনিত সমস্যা
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে সেটি হল অনিদ্রা। যারা অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যবহারকারীরাই মানসিক চাপে থাকে।
যার ফলে ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো ঘুম দিতে পারেনা। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে মোবাইল ফোনের উজ্জ্বল আলোকরশ্মি থেকে নির্গত এক ধরনের মেলাটোনিন পদার্থ আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।
জীবাণুভরা মোবাইল ফোন !
কিছু কিছু মনোবিজ্ঞানী বা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে টয়লেটের চেয়েও সবচেয়ে বেশি জীবাণু থাকে মোবাইল ফোনে।
মোবাইল ফোন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে জীবাণুর কারখানায় পরিণত হয়। এ ধরনের জীবাণু গুলো খুব বেশি মারাত্মক না হলেও মানুষের শরীরের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধিগুলো ছড়িয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত সময় নষ্ট হওয়া
মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে নিজের অজান্তেই মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। যেটা অধিকাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা ভাল করে খেয়াল করেন না।
মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন রুটিনকে অনুসরণ করতে ব্যাঘাত ঘটায়। আমরা সারাদিন মোবাইলে গেম খেলে, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউবে ভিডিও দেখে মূল্যবান সময় নষ্ট করে থাকি।
এই সময়গুলো একজন ছাত্র তার পড়াশোনায় দিলে অনেক বেশি ভালো করতে পারবে। অথবা নতুন কোন দক্ষতায শেখার কাজে এই সময় দিলে আরো বেশি দক্ষ হওয়া সম্ভব।
স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া
আমরা সারাদিন নানা রকম কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের মস্তিষ্কও সেই সঙ্গে ব্যস্ত থাকে। অনেকে আবার আছেন খুব বেশি ব্যস্ত তারা বিশ্রাম নেওয়ার সময় পান না।
সুস্থ থাকতে হলে মস্তিষ্কের বিশ্রামও আবশ্যক। কিন্তু আমরা অনেক সময় বিশ্রাম নিতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট করে থাকি।
যেটা আমাদের মস্তিষ্কের বিশ্রাম ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি কমে যায়।
আমাদের কথা
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, কানে কম শোনা, শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া, শুক্রাণু কমে যাওয়া, সময় নষ্ট হওয়া, শরীরের বিভিন্ন সমস্যা এবং নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে খুব বেশি সর্তকতা অবলম্বন করা। নতুবা আমাদের খামখেয়ালিপনায় নিজেদের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। আশা করছি পোষ্টটি পড়ে আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপকারিতা সমূহ সম্পর্কে সঠিক জেনেছেন।