ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করার জন্য, পণ্য বিক্রি করার জন্য এবং ক্রেতাদের মত ইমেইল মার্কেটিং সবকিছু করতে পারে। ইমেইল মার্কেটিং হলো জনপ্রিয় এবং কার্যকরী একটি টুলস মার্কেটিং কোম্পানিগুলোর জন্য। ব্যবসায় যোগাযোগে ইমেইল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে এখন। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ইমেইল প্রদান করা হয়। এই পোষ্টের আলোচনার বিষয় ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ইমেইল ব্যবহার করে, আপনার সেবাসমূহ বা পণ্য সমূহ হতে পারে একটি নমনীয়, দ্রুত এবং খরচ কমানো পদ্ধতি যেটি নতুন ক্রেতাদের নিকট পৌঁছাতে এবং ক্রেতাদের ধরে রাখতে বারবার ওয়েবসাইট ভিজিট করিয়ে রাখে।

ইমেইল মার্কেটিং করে লক্ষ্যস্থিত ক্রেতাদের নিকট ব্যক্তিগত বার্তা প্রদান করা যায়। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে। এটি কিভাবে উপকার করে এবং কিভাবে প্রমোশনালভাবে ইমেইল ব্যবহার করে ব্যবসায় উন্নতি করা যায়।

ইমেইল মার্কেটিং কী?

ইমেইল মার্কেটিং হলো একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে ইমেইল ব্যবহার করে নিজের ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা প্রচার করা হয় সম্ভাব্য ক্রেতাদের নিকট। আপনি ইমেইল মার্কেটিং ব্যবহার করতে পারেন নতুন পণ্যসমূহ বা ডিসকাউন্ট সম্পর্কে সচেতন করার জন্য ইমেইল তালিকা তৈরি করে।

ইমেইল মার্কেটিং একদিকে যেমন সরাসরি মার্কেটিং বা প্রত্যক্ষ মার্কেটিং তেমনি ডিজিটাল মার্কেটিংও । ইমেইল মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপনার বিক্রয় কৌশল এ। ইমেইল মার্কেটিং মূলত ব্যবহৃত হয় লিড জেনারেশন, ব্র্যান্ড পরিচিতি , ক্রেতা একত্রীকরণ, সম্পর্ক তৈরি এবং কাস্টমারের কাছে তথ্য পৌঁছাতে।

এটি মুলত ব্যবহার করা হয় তাদের লেটেস্ট আইটেম সম্পর্কে ধারণা দিতে এবং অফার সম্পর্কে ক্রেতাদের মাঝে সাড়া সৃষ্টিতে।

কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং কাজ করে ?

ইমেইল মার্কেটিং সেটআপ করা অত্যন্ত সহজ, যার ফলে ছোট ধরনের ব্যবসায় কাজে এটি ব্যবহার করা সহজ। আপনি চাইলে আপনার ওয়েবসাইট বা অ্যাপে নিউজলেটার সাইন আপ অপশন চালু করতে পারেন। এটি ব্যবহার করে আপনি অডিয়েন্সের কাছ থেকে নিউজলেটার পাবেন। আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের নিকট নিউজলেটার পাঠাতে সক্ষম হবেন।

ইমেইল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি অত্যন্ত সহজ ও খরচ কম। খুব অল্প জ্ঞান নিয়ে ইমেইল মার্কেটিং কাজ পরিচালনা করা সম্ভব। নিয়মিত নিউজলেটার পাঠানোর মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির কোন অফার বা আপডেট সম্পর্কে ক্রেতাদের নিকট অবহিত করতে পারেন।

বিশেষ দিনে বিশেষ ধরনের স্পেশাল অফার প্রদানের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিকট কোন পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। এ ধরনের কাজ ব্যবসায় উন্নতি ও কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক তৈরি এবং তাদের বিশ্বস্থতা বাড়ায়।

ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ইমেইল মার্কেটিং আপনাকে সাহায্য করতে পারে ক্রেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরিতে। এটি আপনাকে সরাসরি সাড়ার হার উন্নতি করে প্রত্যক্ষ মার্কেটিং কোম্পানিগুলোর।

ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক। নিচে ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তালিকা পদ্ধতিতে উল্লেখ করা হলো :

  • ইমেইল মার্কেটিং অনেক ব্যয় সাশ্রয়ী একটি পদ্ধতি। অন্যান্য মার্কেটিং পদ্ধতির তুলনায় এটি কম খরচ বহন করে। এখানে কোনো বিজ্ঞাপন ও প্রিন্টিং খরচ নেই।
  • যেসব লোকজন চাইবে ইমেইল পেতে শুধু তারাই ব্যবহার করতে পারবে। অন্য ইচ্ছে করলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
  • এখানেও অনেক নমনীয়তার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। ইচ্ছামত ডিজাইন করে নিজের ব্যান্ডের পরিচিত বাড়ানো যায়।
  • ইমেইল মার্কেটিং এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। আপনি চাইলে লক্ষ্যস্থিত ক্রেতা বা বিশাল অডিয়েন্স এর নিকট ইমেইল পাঠিয়ে মার্কেটিং করতে পারবেন।
  • আপনি চাইলে ক্রেতা বাজার বিভক্তি করে বিভিন্ন মানুষকে নির্দিষ্ট করে নির্দিষ্ট কিছু মেইল পাঠাতে পারবেন।
  • ইমেইল মার্কেটিং অত্যন্ত সহজ বলে এটি ব্যবহার করে খুব সহজে ভাইরাল মার্কেটিং করা যায়। এটা খুব সহজেই শেয়ার করা যায়। তাই খুব দ্রুত ভাইরাল হয়।
  • ইমেইল মার্কেটিংয়ের চাবিকাঠি হলো কথোপকথন এবং বিক্রয় বৃদ্ধি । যা নতুন কোন পণ্যের প্রমোশন করতে ব্যবহার করতে পারবেন।
  • ইমেইল মার্কেটিং এর সফলতা পরিমাপ করা যায় এবং চাইলে ইচ্ছেমত অপটিমাইজ করে কোম্পানির কোন টেক্সট বা ডিজাইন আরো কার্যকরভাবে দেখা যায়।
  • আপনি চাইলে ফ্রী বেঞ্চমারকিং রিপোর্ট দেখে আপনার মার্কেটিং এর উন্নতি ও অবনতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এবং উন্নতি করার সুযোগ সুবিধা দেখতে পারবেন।
  • ইমেইল মার্কেটিং একটি পরিবেশবান্ধব প্রত্যক্ষ মার্কেটিং পদ্ধতি যেটি মেইল প্রদান করে এবং কোন ধরনের প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয় না।
  • ইমেইল মার্কেটিং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের সময় বাঁচিয়ে দেয়। সবগুলো কাস্টমারকে একসাথে ইমেইল পাঠানো যায়। যার ফলে অনেক সময় বেঁচে যায়।

কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন?

আপনাকে প্রথমে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে নিতে হয়। যার ফলে ইমেইল কনটেন্ট তৈরি করা আপনার জন্য আরও বেশি সহজ হবে। আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করবেন :

একটা ভালো ডিজাইনের ইমেইল তৈরি করা

অধিকাংশ ইমেইল মার্কেটিং সেবায় ইমেইল এডিট করার জন্য সহজ ও ঝামেলামুক্ত অনেক ডিজাইন রয়েছে। আপনি চাইলে ইমেইল ডিজাইনার ভাড়া করে একটা কাস্টম টেম্পলেট তৈরি করতে পারেন।

আপনি সহজ ও সুন্দর একটা ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি করে নিবেন। আপনি চাইলে অলরেডি প্রস্তুতকৃত অনেক ইমেইল টেমপ্লেট ডিজাইন করা রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এসব ডিজাইনকৃত টেমপ্লেট ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনার ইমেইল এর কপি তৈরি করুন

ইমেইলের কপিতে আপনার অফারের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। টার্গেটকৃত কাস্টমারদের আপনার কোন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আগ্রহ তৈরিতে যেসব বিষয় পরিষ্কার করতে হবে তা লিখতে অবশ্যই ভুলবেন না। একটা ভালো মানের ইমেইল কপি লেখার জন্য নিচের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না:

  • নিজেকে প্রশ্ন করুন অডিয়েন্স কী চায় এবং কিভাবে আপনি তাদের সাহায্য করতে পারবেন।
  • একজন কাস্টোমার এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সব কিছু লেখার চেষ্টা করবেন এবং কাস্টমারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করে লিখবেন।
  • আপনার ব্র্যান্ডের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে ভুলবেন না।
  • একটা সুন্দর গল্প বলুন।
  • এমনভাবে লিখুন যেন পড়তে কৌতুহল তৈরি হয়।
  • সংলাপ আকারে সব লিখবেন।
  • ইমেইল কপি লেখা বন্ধ করুন।
  • সময় ও চর্চা ইমেইল রাইটিংকে সমৃদ্ধ করতে পারে।

ইমেইল পাঠানোর পূর্বে টেস্ট করা

আপনার তৈরি করা ইমেইল কপি কাস্টমারদের পাঠানোর পূর্বে অবশ্যই নিজে টেস্ট করে নিবেন। তাহলে আপনি কোন ধরনের ভুল ত্রুটি থাকলে তা শনাক্ত করে সংশোধন করে নিতে পারবেন। ইমেইল মার্কেটিং করতে যে ধরনের ইমেইল পাঠাতে হয় আপনাকে আগে নিশ্চিত করতে হবে সেরকম একটা ইমেইল তৈরি করতে পেরেছেন কিনা! এজন্য আপনাকে উক্ত বিষয়সমূহ ভালোভাবে জেনে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আপনাকে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তি সহযোগিতা করতে পারেন।

ইমেইল পাঠানোর উপযুক্ত শিডিউল তৈরি করা

এলোমেলো অগোছালো সময় ও তারিখ নির্ধারণ করেছে বুদ্ধি খাটিয়ে উপযুক্ত সময় নির্দিষ্ট করুন। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে কাস্টমার কখন তাদের ইমেইলগুলো চেক করে থাকে। এমন একটা সময় নির্বাচন করতে হবে যখন টার্গেটকৃত কাস্টমার ইমেইল চেক করে।

ভালো একটা সময় নির্বাচন করতে পারলে আপনার পাঠানো ই-মেইল ওপেন করার হার বৃদ্ধি পাবে। ডাটাবেজ থেকে ধারণা নিয়ে উপযুক্ত সময় নির্বাচন করুন।

ইমেইল মার্কেটিং বিশ্লেষণ করতে হবে আপনাকে কিছু টুল ব্যবহার করতে হবে। ইমেইল মার্কেটিং পরিমাপক অনেক কিছু রয়েছে। পাঠানো ই-মেইল এর পারফর্মেন্স চেক করার জন্য আপনাকে কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করতে হবে। সেগুলো তুলে ধরলাম নিচে :

  • Open Rate : এটি হলো আপনি যতগুলো ইমেইল সেন্ড করেছেন তার মধ্যে কয়জন ব্যক্তি ইমেইল তৎক্ষণাৎ ওপেন করেছে তার অনুপাত।
  • Click-Through Rate : এটি হলো আপনার পাঠানো ই-মেইল এ কতজন ক্লিক করেছে ও কতজনকে মোট পাঠানো হয়েছে তার একটা অনুপাত।
  • Unsubscribe Rate : এটি হলো এমন ধরনের অনুপাত সেখানে আপনার পাঠানো মোট ইমেইলকারীদের মধ্যে কতজন আনসাবস্ক্রাইব করেছে সেটি।
  • Bounce Rate : এটি হল এমন এক ধরনের অনুপাত সেখানে আপনার পাঠানো ই-মেইল এর কয়টি ব্যর্থ হয়েছে তার সংখ্যা বা অনুপাত।

আমাদের কথা

আজকের আর্টিকেল এর বিষয় ছিল ইমেইল মার্কেটিং কী এবং ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। আশা করছি আজকের আর্টিকেল পড়ে ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা অর্জন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button